Wellcome to National Portal
কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাষ্ট স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৩rd ডিসেম্বর ২০২৪

ইতিহাস ও পটভুমি

কমিউনিটি ক্লিনিক: একটি গণমূখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

 

 

পটভূমি :

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত মহান মুক্তি যুদ্ধ এবং ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধস্ত এ দেশকে গড়তে এবং স্বাস্ব্যখাতের উন্নয়নে বিভিন্ন বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। তৃণমূল পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমকে বিকেন্দ্রীকরণের পদক্ষেপ হিসাবে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে ধাপে ধাপে তৃণমূল পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা আয়োজিত ১৯৭৮ সালের আলমা-আটা শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশ অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশ। আলমা আটার ঘোষণা ছিল প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার মাধ্যমে “২০০০ সনের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য”। কিন্তু ১৯৯৬ সনের সমীক্ষায় দেখা যায় যেবিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ লক্ষ্যের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। ১৯৯৬ সালে গ্রামীণ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মানসম্মত প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। মূলত জনগণের অংশগ্রহণে গ্রামীণ মানুষের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা পৌঁছে দেওয়াই ছিল লক্ষ্য।

 

কমিউনিটি ক্লিনিক হলো  একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কার্যক্রম যা Community Based Health Care (CBHC) অপারেশনাল প্ল্যান এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং সরকারের সাফল্যের এক উজ্জল দৃষ্টান্ত যা দেশে-বিদেশে নন্দিত। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগণ নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সমন্বিত স্বাস্থ্যপরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি সেবা পাচ্ছেন। এটি জনগন ও সরকারের যৌথ প্রয়াসে বাস্তবায়িত একটি কার্যক্রম। জনমূখী এ কার্যক্রম ১৯৯৬ সালে গৃহীত হয় যার বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। ২৬ এপ্রিল ২০০০ সালে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নের গিমাডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক সেবা কার্যক্রমের শুভ সূচনা করেন। ১৯৯৮-২০০১ সময়ে ১০০০০ এর অধিক কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মিত ও অধিকাংশই চালু করা হয় এবং জনগণ সেবা পেতে শুরু করে। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় নদীভাংগন ও অন্যান্য কারণে ৯৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক ধ্বংস হয়ে যায় এবং ১০৬২৪টি বিদ্যমান থাকে। পরবর্তীতে ২০০৯ সাল হতে Revitalization of Community Health Care Initiativs in Bangladesh (RCHCIB) শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক পুনঃরুজ্জীবিতকরণ কার্যক্রম শুরু হয়। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে ১৯৯৮-২০০১ সময়ে নির্মিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলির প্রয়োজনীয় মেরামতজনবল পদায়নঔষধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ পূর্বক এবং নতুন নির্মিত কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যায়ক্রমে চালু করা হয়। এটি ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

 

কমিউনিটি ক্লিনিক পূনঃরুজ্জীবিতকরণের শুরু হতেই স্বাস্থ্য সেবার মূলধারার সাথে সমন্বয় রেখে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মকান্ড মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় জুলাই ২০১১ হতে RCHCIB প্রকল্পের পাশাপাশি HPNSDP এর আওতায় Community Based Health Care (CBHC) অপারেশনাল প্ল্যান এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। RCHCIB প্রকল্পের মেয়াদ অন্তে জুলাই ২০১৫ হতে CBHC অপারেশনাল প্ল্যান এর মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক এর সকল কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে যা ডিসেম্বর ২০১৬ তে সমাপ্ত হয়েছে।

বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ৪র্থ সেক্টর (৪র্থ এইচপিএনএসপি) কর্মসূচিতে Community Based Health Care (CBHC) অপারশেনাল প্ল্যান জানুয়ারি ২০১৭ হতে জুন ২০২৩ মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

 

উল্লখ্যে যে, কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমকে গতিশীল ও টেকসই করার লক্ষ্যে মহান জাতীয় সংসদে ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট বিল পাশ হয়। অতঃপর মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে ৮ অক্টোবর ২০১৮ আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয় (২০১৮ সালের ৫২ নং আইন)। এই আইনের বলে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের আওতাধীন Community Based Health Care (CBHC) অপারশেনাল প্ল্যানের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহ পরচালিত হচ্ছে।

 

কমিউনিটি ক্লিনিক পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) এর একটি অনন্য উদাহরণ সব কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে উঠেছে জনগণের দান করা জমিতে। সরকার ভবন নির্মাণসেবাদানকারী নিয়োগঔষধসহ প্রয়োজনীয় যাবতীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ সরবরাহ করছে। পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা করছে সরকার এবং জনগণ সম্মিলিতভাবে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার জন্য সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল অংশ নিয়ে ১৩-১৭ সদস্য বিশিষ্ট (এর মধ্যে অন্ততপক্ষে ৪ জন মহিলা) একটি কমিউনিটি গ্রুপ (সিজি) আছে। এই পরিচালনা কমিটির (সিজি) সভাপতি হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ওর্য়াডের নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার। সিসি পরিচালনা ও জনগণকে সিসি হতে সেবা গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণে প্রতিটি কমিউনিটি গ্রুপকে সহযোগিতার জন্য ১৩-১৭ সদস্য বিশিষ্ট ৩টি সাপোর্ট গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তার ইউনিয়নের সবগুলো সিসি’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক। সরকারি সেবাদানকারীগন এই কমিটিগুলোকে প্রয়োজনীয় কারিগরি ও সেক্রেটারিয়েল সাপোর্ট প্রদান করে থাকে। সিবিএইচসি কার্যক্রমের আওতায় কমিউনিটি গ্রুপ ও কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ সদস্যদের প্রশিক্ষণ/ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা হয়েছে।

 

কমিউনিটি ক্লিনিক উল্লেখযোগ্য সেবাসমূহ :

  • প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা
  • গর্ভবতী ও প্রসূতির স্বাস্থ্য সেবা
  • নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা
  • পরিবার পরিকল্পনা সেবা
  • পুষ্টি সেবা
  • ইপিআই
  • সাধারণ রোগ ও জখমের চিকিৎসা সেবা
  • অসংক্রামক রোগ সনাক্তকরণ ও রেফারেল
  • কিশোর-কিশোরী ও নববিবাহিত দম্পতিদের সেবা
  • কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান, জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও টিকা প্রদানে সহযোগিতা প্রদান
  • স্তন ও জরায়ু মুখে ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান, জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও ভায়া স্ক্রিনিং, রেজিষ্ট্রেশন করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ
  • জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধীকরণ
  • জরুরি ও জটিল রোগীর রেফারেল সেবা
  • স্বাভাবিক প্রসব (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  • কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মএলাকার জনগণকে খানাভিত্তিক অনলাইন রেজিষ্ট্রেশন ও হেলথ আইডি কার্ড প্রদান
  • অন্যান্য সেবা

 

কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবাদাতা ও সেবাদানের সময় ও প্রক্রিয়া:

 

১.    সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত সপ্তাহে ৬ দিন (শনিবার হতে বৃহস্পতিবার) সকাল ৯:০০ টা হতে বিকাল ৩:০০ টা পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক খোলা থাকে।

২.   কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) প্রতি কর্মদিবসে কমিউনিটি ক্লিনিকে উপস্থিত থেকে সেবাপ্রদান করেন এবং সিএইচসিপি এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারী প্রত্যেক সপ্তাহে নূন্যতম ৩ দিন করে (পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে) কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা প্রদান করেন।

৩.   কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য নির্ধারিত সময়ে কমিউনিটি ক্লিনিক খোলা রাখতে হবে। মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম সমন্বয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারীর মধ্যে কে কবে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারকে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবাপ্রদানে সহায়তা করবেন তা যৌথভাবে পরিকল্পনা প্রণয়নপূর্বক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অনুমোদন সাপেক্ষে বাস্তবায়িত হবে। অনুমোদিত কর্মসূচির ১টি কপি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর প্রেরণ করতে হবে এবং ১টি কপি কমিউনিটি ক্লিনিকে টানিয়ে রাখতে হবে।

৪.   যে সকল এলাকায় পুষ্টিকর্মী আছে তাঁরা নিয়ম অনুযায়ী কমিউনিটি ক্লিনিক এলাকার নির্ধারিত কার্যক্রম কমিউনিটি ক্লিনিকে থেকে করবেন।

৫.   কমিউনিটি গ্রুপ ও কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপের সদস্যবৃন্দ কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা প্রদান ও মান উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করবেন।

৬.   এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করেন- এমন গ্রাম্য চিকিৎসক, দাই এবং অন্যান্য সেবাদানকারী, মাদার সাপোর্ট গ্রুপ ও এনজিও কর্মীদেরকে UHFPO, UFPO & MOMCH কমিউনিটি ক্লিনিকের সাথে সম্পৃক্ত করে তাঁদের  সেবা নিশ্চিত করবেন।

 

 

কমিউনিটি ক্লিনিকের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রও অর্জন :

 

কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ ও চালুকরণ

নির্মাণ লক্ষ্যমাত্রাঃ সারাদেশে মোট ১৪৮৯০টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের পরিকল্পনা আছে।

চালুকরণঃ বর্তমানে সারাদেশে মোট ১৪২০০ টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে।

নির্মাণাধীনঃ ৬৭ টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ কাজ চলমান আছে।

জনবল নিয়োগ

কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবাপ্রদানের লক্ষ্যে সারাদেশে মোট ১৩৬৬৭ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কর্মরত আছে। এছাড়া ২০২২ সালে আরো ৭৭১টি শুন্য পদে সিএইচসিপি নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে।

কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সুবিধাভোগী

২০০৯ সাল হতে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১১৪ কোটির অধিক ভিজিটের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণ কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সেবা গ্রহণ করেছেন। যাদের অধিকাংশই নারী এবং শিশু। গড়ে প্রায় প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন ৩৮ জন সেবাগ্রহীতা সেবা গ্রহণ করে থাকে।

কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সেবাগ্রহণকারীদের মধ্য হতে প্রায় ১ কোটি জরুরি ও জটিল রোগীকে উচ্চতর পর্যায়ে রেফার করা হয়েছে।

৪০০০ এর অধিক কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসব সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ২০০৯ সাল হতে ২০২২ সাল পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রায় ১ লক্ষ স্বাভাবিক প্রসব সম্পন্ন হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, সকল কমিউনিটি ক্লিনিক টিকাদান কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বিগত ৪ বছরে কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সেবা গ্রহণকারীঃ বিগত ৪ বছরে কমিউনিটি ক্লিনিক হতে মোট ৩৫ কোটি ৬০ লক্ষের অধিক সেবাগ্রহীতা স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন। তন্মধ্যে ৮ লক্ষ ৯০ হাজার জন গর্ভবতী মহিলা গর্ভকালীন সেবা গ্রহণ করেছেন। এছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে ৮০ হাজার এর অধিক স্বাভাবিক প্রসব সম্পন্ন হয়েছে। ৩০ লক্ষ ২৬ হাজার এর অধিক ৫ বছরের কম বয়সী শিশুকে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা প্রদান করা হয়েছে।

ঔষধ সরবরাহ

কমিউনিটি ক্লিনিকে বর্তমানে ২৭ প্রকার ঔষধ এবং ২ প্রকার পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। প্রতি কমিউনিটি ক্লিনিকে গড়ে বছরে ১.৫০ লক্ষ টাকার ঔষধ সরবরাহ করা হয়।

কমিউনিটি ক্লিনিকে তথ্য সরবরাহ ও সংরক্ষণ

কমিউনিটি ক্লিনিক হতে অন-লাইন রিপোর্ট এবং তথ্য সরবরাহ ও সংরক্ষণের নিমিত্তে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ইন্টারনেট সংযোগসহ ১টি করে ল্যাপটপ সরবরাহ করা হয়েছে। বর্তমানে ৯৫.৪৭% কমিউনিটি ক্লিনিক হতে অন-লাইন রিপোর্টিং হচ্ছে।

এছাড়া প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে বিভিন্ন প্রকার রেজিস্টার, ফরম, এএনসি কার্ড, জিএমপি কার্ড ইত্যাদি সরবরাহ করা হয়েছে। এসব রেজিস্টারে তথ্য সরক্ষণ করা হচ্ছে।

প্রশিক্ষণ কার্যক্রম

বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগকৃত সিএইচসিপিদের ১২ সপ্তাহ ব্যাপী মৌলিক প্রশিক্ষণ (৬ সপ্তাহ তাত্ত্বিক ও ৬ সপ্তাহ ব্যবহারিক) প্রদান করা হয়েছে। পরবর্তীতে কর্মরত সকল সিএইচসিপিদের ১ সপ্তাহ ব্যাপী পুনঃপ্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার নিমিত্তে বিভিন্ন পর্যায়ের ৬০০০ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপক এবং ১৬০০০ সুপারভাইজারকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

স্থানীয়ভাবে কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা এবং জনগণকে কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সেবা গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে ২,১৫,০০০ কমিউনিটি গ্রুপ সদস্য, ৬,৬৭,০০০ কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ সদস্য এবং ৬৭,০০০ স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

 

 

কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমে জনগণের সম্পৃক্ততা

কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমে জনগণের সম্পৃক্ততা     কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। কমিউনিটি ক্লিনিক এর স্থানীয়ভাবে সার্বিক পরিচালনা ও স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের নিমিত্তে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ১৩-১৭ সদস্য বিশিষ্ট ১টি কমিউনিটি গ্রুপ (সিজি) এবং এ গ্রুপকে সহযোগিতা করার জন্য প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ১৩-১৭ সদস্য বিশিষ্ট ৩টি কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ রয়েছে। উল্লেখ্য যে, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইউনিয়নস্থ সকল কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং সংরক্ষিত আসনের নির্বাচিত মহিলা সদস্যগণ ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের মহাবিদ্যালয়/মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষগণ কমিউনিটি ক্লিনিকের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করছেন।

 

কমিউনিটি গ্রুপঃ কমিউনিটি গ্রুপই কমিউনিটি ক্লিনিকের মূল চালিকা শক্তি। তারা কমিউনিটি ক্লিনিকের দৈনন্দিন পরিচালনা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা, স্থানীয়ভাবে তহবিল সংগ্রহ ও ব্যবহার নিশ্চিতকরণসহ কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনায় সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন।

এছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ অধিকতর নিবিড়করণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

শ্রেষ্ট কমিউনিটি ক্লিনিকের পুরস্কার প্রদান

কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার পরিমান ও মান; অবকাঠামো; কমিউনিটি গ্রুপ ও সাপোর্ট গ্রুপ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা; স্বাভাবিক প্রসব; স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, তহবিল সংগ্রহ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থানপার বিবেচনায় ২০১৩ ও ২০১৪ সালে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ট কমিউনিটি ক্লিনিক নির্বাচন করা হয়েছে। 

 

 

প্রচার সংক্রান্ত কার্যক্রম

কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও জনগনের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকল্পে দেশের কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে টিভি স্পট ও টিভি স্ক্রল (১৪ সপ্তাহ ব্যাপী) সম্প্রচার করা হয়েছে।

কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম মনিটরিং

মাসিক প্রতিবেদন বিশ্লেষন। উল্লেখ্য যে, সকল কমিউনিটি ক্লিনিকে ল্যাপটপ ও মডেম বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক হতে অনলাইনে রিপোটিং হচ্ছে।

নিয়মিত কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শণ (সুনির্দিষ্ট চেকলিষ্টসহ)।

প্রকল্প কার্যালয় থেকে কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত “সিএইচসিপিদের মোবাইলের মাধ্যমে মনিটরিং করা হয়।

মাসিক সভায় (জাতীয়/বিভাগ/জেলা/ উপজেলা/ ইউনিয়ন পর্যায়ে) কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের পর্যালোচনা।

সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা

কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমে জনগণের সচেতনতাবৃদ্ধি ও সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় এর আওতায় দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক সংস্থা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বেশীর ভাগ সংস্থা কমিউনিটি গ্রুপ ও কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপের দক্ষতা ও জনগনের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে। এছাড়া কোন কোন সংগঠন মা ও শিশুদের পুষ্টির মানোন্নয়নে কাজ করছে। ত্রৈমাসিক সমন্বয় সভায় তাদের কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়।

 

সমস্যা/র্দুবল দিক সমূহ :

 

  • কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) দের চাকুরী কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টে ন্যস্ত না হওয়াতে অনেক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সিএইচসিপি চাকুরী হতে অব্যহতি নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।
  • অবকাঠামোগত সমস্যা : যে সকল কমিউনিটি ক্লিনিক ১৯৯৮-২০০১ সময়ে নির্মিত হয়েছিল তার অধিকাংশেরই অবকাঠামো নাজুক এবং বেশির ভাগই মেরামত অযোগ্য। সেগুলি পুনঃনির্মাণ আবশ্যক। ২০২২ সাল নাগাদ ২০০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক পুনঃ নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। তবে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করতে হবে।
  • ক্রমবর্ধমান চাহিদা :  জনগণের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সকল সেবা আরো সহজলভ্য করার জন্য কার্যকরী পদক্ষেম গ্রহণ আবশ্যক, যেমন : কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস রোগে সেবনযোগ্য ঔষধের সরবরাহ নিশ্চিত করা, স্ক্রিনিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখা ইত্যাদি।
  • জনসম্পৃক্ততা : বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি গ্রুপ সকল ক্ষেত্রে সক্রিয় থাকলেও কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ সকল ক্ষেত্রে সক্রিয় নয়। তাই এ সকল সাপোর্ট গ্রুপকে সক্রিয় করার মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে।
  • মনিটরিং ও সুপারভিশনঃ মাঠ পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম সরেজমিন সুপারভিশন ও মনিটরিং এ কিছুটা দূর্বলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সকলের অংশগ্রহণ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম সুপারভিশন ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

 

ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা :

 

১.     রেফারেল ব্যবস্থাঃ ইতিমধ্যে প্রণয়নকৃত রেফারেল কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক হতে রেফারেল ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ (সিসি হতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার থাকা সাপেক্ষে ইউনিয়ন সাব-সেন্টারে)।

 

২.     কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণঃ ৪র্থ সেক্টর প্রোগ্রামের আওতায় অবশিষ্ট কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ ও চালুকরণ এবং পর্যায়ক্রমে প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংলগ্ন এলাকার জনগণের  জন্য ১টি করে সিসি ইউনিট স্থাপন।

 

৩.     মনিটরিং ও সুপারভিশনঃ টেকনিক্যাল সুপারভিশনের মাধ্যমে মনিটরিং ও সুপারভিশন ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। টেকনিক্যাল সুপারভিশনের জন্য একটি চেকলিষ্ট প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সকল বিভাগ, জেলা ও উপজেলা ব্যবস্থাপকদের এই চেকলিষ্ট ব্যবহার বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা হয়েছে। এই চেকলিষ্ট ব্যবহার করে সিসি সুপারভিশন এবং এর মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষন, ফিডব্যাক ও শেয়ারিং এর মাধ্যমে সিসি হতে প্রদত্ত সেবার গুনগত মান বৃদ্ধি সম্ভব হবে। একই সাথে সাধারণ চেকলিষ্ট যাতে মূলত প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনাগত বিষয় অর্ন্তভুক্ত, ব্যবহার করে সিসি মনিটরিং ও সুপারভিশন চলমান থাকবে।

 

৪.     হেলথ আউটকাম পরিমাপঃ পর্যায়ক্রমে প্রতিটি সিসি সংলগ্ন এলাকার খানাভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং এই তথ্য সিসি’তে সেবাদানের তথ্যের সাথে তুলনামূলক বিশ্লেষনের মাধ্যমে সেবা গ্রহণে সমতা, প্রবেশযোগ্যতা ও সেবা কেন্দ্রের সুষম ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে কিনা তা যাচাই করা হবে। এক্ষেত্রে কোন বাধা থাকলে তা দূরীকরণের পথ বের করা। 

 

৫. ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২০ - ২০২৫) সেক্টর ১০ এর স্বাস্থ্য টেবিল- ১০:২ এর লক্ষ্যমাত্রায় উল্লিখিত ১৬টি সূচকের মধ্যে ১১টি সূচক কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত; যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

  • মাতৃ মৃত্যু হ্রাস;
  • শিশু মৃত্যু ও অপুষ্টি হ্রাস;
  • নবজাতকের মৃত্যু হ্রাস;
  • সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে প্রাথমিক সনাক্তকরণ ও রেফারেল;
  • অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে প্রাথমিক সনাক্তকরণ ও রেফারেল;
  • পরিবার পরিকল্পনা সেবার আওতা বৃদ্ধি;
  • স্বাস্থ্য শিক্ষা ও কাউন্সেলিং;
  • কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্য ইত্যাদি।

 

    এসডিজি সম্পৃক্ততা :

 

অভীষ্ট: ২০৩০ সালের মধ্যে সব বয়সের সকল মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা। কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমে মূল উদ্দেশ্য; লক্ষ্যমাত্রা: স্বাস্থ্য সম্পর্কিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৩টি সূচকের মধ্যে বেশীরভাগই কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত। বিশেষ করে ৩.৮ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিসেবা (Essential Service Package) সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রাটি কমিউনিটি ক্লিনিকের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

 

    ভিশন ২০৪১ :

 

উন্নত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠন এবং সুস্থ সবল রোগমুক্ত সচেতন কর্মক্ষম জাতি গঠন।

 

 

উপসংহার : কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমান সরকারের একটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ এবং এটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপের (পিপিপি) এক অনন্য উদাহরণ। গ্রামীণ জনগণের স্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যেই এটি স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে গ্রামীণ জনগণ পুষ্টি (পুষ্টি হীনতা ও অতি পুষ্টি), স্বাস্থ্যকর খাবার ও জীবনাচারণ এবং সামাজিক আচরণ পরিবর্তন যোগাযোগের (এসবিসিসি) মাধ্যমে অন্যান্য প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা, মায়েদের জন্য প্রসব পূর্ব ও প্রসব পরবর্তী সেবা ইত্যাদি সর্ম্পকে আরও সচেতন হতে পারছে। এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী নিশ্চিত করা হচ্ছে এবং যার মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ মাকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করে উচ্চতর সেবা কেন্দ্রে রেফার করা হচ্ছে। এগুলো মাতৃমূত্যু, শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনবে। কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে অন্যান্য লক্ষ্যের সাথে সাথে এসডিজি ৩ অর্জনেও (সব বয়সের সবার জন্য সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণ) ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করছি এই বিশ্বনন্দিত কার্যক্রমে জাতিসংঘসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগি সংস্থা তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সত্যিকারভাবেই একটি স্বাস্থ্যকর জাতি হিসেবে গড়ে উঠবে।

 

 

কমিউনিটি ক্লিনিকের (সিসি) চ্যালেঞ্জ ও করণীয় দিকসমূহ :

 

  1. কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) দের চাকুরী কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টে ন্যস্ত না হওয়াতে অনেক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সিএইচসিপি চাকুরী হতে অব্যহতি নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।

 

  1. অবকাঠামোগত সমস্যা : যে সকল কমিউনিটি ক্লিনিক ১৯৯৮-২০০১ সময়ে নির্মিত হয়েছিল তার অধিকাংশেরই অবকাঠামো নাজুক এবং বেশির ভাগই মেরামত অযোগ্য। সেগুলি পুনঃনির্মাণ আবশ্যক। ২০২২ সাল নাগাদ ২০০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক পুনঃ নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। তবে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করতে হবে।

 

  1. ক্রমবর্ধমান চাহিদা : জনগণের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সকল সেবা আরো সহজলভ্য করার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক, যেমন : কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস রোগে সেবনযোগ্য ঔষধের সরবরাহ নিশ্চিত করা, স্ক্রিনিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখা ইত্যাদি।

 

  1. জনসম্পৃক্ততা :  বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি গ্রুপ সকল ক্ষেত্রে সক্রিয় থাকলেও কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ সকল ক্ষেত্রে সক্রিয় নয়। তাই এ সকল সাপোর্ট গ্রুপকে সক্রিয় করার মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে।

 

  1. মনিটরিং ও সুপারভিশন : মাঠ পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম সরেজমিন সুপারভিশন ও মনিটরিং এ কিছুটা দূর্বলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সকলের অংশগ্রহণ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম সুপারভিশন ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

 

  1. সমন্বয় : জাতীয় পর্যায়ে ও মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের সমন্বয় : যেহেতেু কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারী কাজ করে থাকে। কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সুষ্ঠু ও মানসম্পন্ন সেবা প্রদানে সিএইচসিপি ও স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারীর সমন্বয় করা খুবই জরুরি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনার অধিদপ্তরের ওপি’র কার্যক্রম কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে বিধায় কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কার্যপরিধি থাকা দরকার।

 

  1. স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্পৃক্ততা : ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনায় কমিউনিটি গ্রুপ ও কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ গঠন এবং পরিচালনায় মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে কারণ তিনি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করেন। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ তাদের উন্নয়ন বাজেট হতে কমিউনিটি ক্লিনিক মেরামত, পানি, পয়নিষ্কাশন, সংযোগ সড়ক স্থাপন, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, আসবাসপত্র সরবরাহ ও বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ। 

 

  1. কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট ও অপারেশনাল প্ল্যান : কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টকে বেগবান করতে সিবিএইচসি অপারেশনাল প্ল্যানের জনবল ট্রাস্টে ন্যস্তকরণের মাধ্যমে ট্রাস্টকে আরো কার্যকর করা। ট্রাস্টে ন্যস্তকৃত জনবলের বেতন ভাতাদি পরিচালন বাজেটের মাধ্যমে প্রদান এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে ঔষধ সরবরাহ এবং জনবলের প্রশিক্ষণ প্রদান নিশ্চিতকরণ।

 

  1. উন্নয়ন কার্যক্রম : কমিউনিটি ক্লিনিকের উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে ৫ম সেক্টর প্রোগ্রামে সিবিএইচসি ওপি’র কার্যক্রম চলমান রাখা।

 

  1. মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার (এমএইচভি): কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মএলাকার প্রতিটি জনগণের তথ্যাদি সংগ্রহসহ বাদপড়াদের খুঁজে বের করে সকলকে কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সেবা গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য এমএইচভি কার্যক্রম ইতোমধ্যে ১০৬টি উপজেলায় চলমান আছে। এদের কার্যক্রম সকল কমিউনিটি ক্লিনিকে চালুকরণ।

 

  1. এসডিজি সম্পৃক্ততা : অভীষ্ট: ২০৩০ সালের মধ্যে সব বয়সের সকল মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা। কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমে মূল উদ্দেশ্য; লক্ষ্যমাত্রা: স্বাস্থ্য সম্পর্কিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৩টি সূচকের মধ্যে বেশীরভাগই কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত। বিশেষ করে ৩.৮ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিসেবা (Essential Service Package) সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রাটি কমিউনিটি ক্লিনিকের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

 

  1. বয়স্কদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান : বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিকে শিশু ও নারীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে বয়স্ক ও অন্যান্য নন কমিউনিকেবল ডিজেজে আক্রান্ত রোগীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণকরণ।

 

 

 

 

  ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা :

 

  1. রেফারেল ব্যবস্থাঃ ইতিমধ্যে প্রণয়নকৃত রেফারেল কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক হতে রেফারেল ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ (সিসি হতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার থাকা সাপেক্ষে ইউনিয়ন সাব-সেন্টারে)।

 

  1. কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণঃ ৪র্থ সেক্টর প্রোগ্রামের আওতায় অবশিষ্ট কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ ও চালুকরণ এবং পর্যায়ক্রমে প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংলগ্ন এলাকার জনগণের  জন্য ১টি করে সিসি ইউনিট স্থাপন।

 

  1. মনিটরিং ও সুপারভিশনঃ টেকনিক্যাল সুপারভিশনের মাধ্যমে মনিটরিং ও সুপারভিশন ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। টেকনিক্যাল সুপারভিশনের জন্য একটি চেকলিষ্ট প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সকল বিভাগ, জেলা ও উপজেলা ব্যবস্থাপকদের এই চেকলিষ্ট ব্যবহার বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা হয়েছে। এই চেকলিষ্ট ব্যবহার করে সিসি সুপারভিশন এবং এর মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষন, ফিডব্যাক ও শেয়ারিং এর মাধ্যমে সিসি হতে প্রদত্ত সেবার গুনগত মান বৃদ্ধি সম্ভব হবে। একই সাথে সাধারণ চেকলিষ্ট যাতে মূলত প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনাগত বিষয় অর্ন্তভুক্ত, ব্যবহার করে সিসি মনিটরিং ও সুপারভিশন চলমান থাকবে।

 

  1. হেলথ আউটকাম পরিমাপঃ পর্যায়ক্রমে প্রতিটি সিসি সংলগ্ন এলাকার খানাভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং এই তথ্য সিসি’তে সেবাদানের তথ্যের সাথে তুলনামূলক বিশ্লেষনের মাধ্যমে সেবা গ্রহণে সমতা, প্রবেশযোগ্যতা ও সেবা কেন্দ্রের সুষম ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে কিনা তা যাচাই করা হবে। এক্ষেত্রে কোন বাধা থাকলে তা দূরীকরণের পথ বের করা। 

 

  1. ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২০ - ২০২৫) সেক্টর ১০ এর স্বাস্থ্য টেবিল- ১০:২ এর লক্ষ্যমাত্রায় উল্লিখিত ১৬টি সূচকের মধ্যে ১১টি সূচক কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত; যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

 

  • মাতৃ মৃত্যু হার হ্রাস;
  • শিশু মৃত্যু ও অপুষ্টি হ্রাস;
  • নবজাতকের মৃত্যু হ্রাস;
  • সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে প্রাথমিক সনাক্তকরণ ও রেফারেল;
  • অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে প্রাথমিক সনাক্তকরণ ও রেফারেল;
  • পরিবার পরিকল্পনা সেবার আওতা বৃদ্ধি;
  • স্বাস্থ্য শিক্ষা ও কাউন্সেলিং;
  • কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্য ইত্যাদি।